জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিন প্লাজায় আজ জুলাই সনদের স্বাক্ষর প্রদান
আজ বাংলাদেশের রাজনীতিতে ঐতিহাসিক এক মুহুর্ত। জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিন প্লাজায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ কিভাবে চলবে তার একটি সনদ ইতিমধ্যে তৈরী হয়েছে সেটা রাজনিতক স্বীকৃতি বা স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জাতীয় ৈঐক্যমত কমিশনের দীর্ঘদিন রাজনৈতিক সদসমুহের সঙ্গে যে আলাপ আলোচনা করে সনদ তৈরী করেছে সেটাতে জনসম্মখে স্বাক্ষর দিয়ে স্বীকৃতি প্রদানের অনুষ্ঠান। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইতিমধ্যে এ অনুষ্ঠান সকল মিডিয়াকে সম্প্রচার করতে অনুরোধ করেছেন। এরমাধ্যমে যে যেখানে থাকবেন সেখান থেকে এ অনুষ্ঠানে সরাসরি যুক্ত হয়ে স্বাক্ষী হওয়ারও তিনি আহ্বন জানান।
জুলাই সনদ বাংলাদেশের একটি প্রস্তাবিত রাজনৈতিক সনদ, যেখানে জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনে ঐক্যমত্য হওয়া সংস্কার প্রস্তাবসমূহের তালিকা অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
জুলাই বিপ্লবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিভিন্ন সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। যার অংশ হিসেবে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। এই কমিশন গুলো সার্বিক বিষয়ে পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় সংস্কারের প্রস্তাব সুপারিশ করে। এই সুপারিশসমূহ বিবেচনা ও গ্রহণের লক্ষ্যে জাতীয়
ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। এই কমিশন রাজনৈতিক দল ও শক্তিগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ১৬৬টির মধ্যে ৮০টির বেশি বিষয়ে ঐক্যমত্য হয়। কমিশন ঐক্যমত্য না হওয়া ২০টি বিষয়ে একসঙ্গে রাজনৈতিক দলসমূহের সাথে আলোচনা করে ১২টি বিষয়ে ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠা করে। এই সংস্কারসমূহ পূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিতের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হবে দেশের সকল রাজনৈতিক দল। সনদে ২৮টি প্রতিশ্রুতি আছে। ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে “জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র” প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি। তবে পরবর্তীতে সরকারের পক্ষ থেকে এটি প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হলে, তারা সেটি স্থগিত করে। এসময় তারা সরকারকে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে এটি প্রকাশের আহবান জানান।
২০২৫ সালের ১৬ জানুয়ারি এটির খসড়া নিয়ে সকল রাজনৈতিক দলসমূহের সাথে বৈঠক করে সরকার। বৈঠক শেষে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানান, সবাই এটি প্রণয়নে একমত হয়েছেন।
১০মে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ আন্দোলনে দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ৩০ দিনের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হবে বলে জানায় সরকার।
গত ৬ জুন জাতির উদ্দেশ্য দেওয়া এক ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস জানান, আগামী জুলাই মাসের সকল রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি ‘জুলাই সনদ’ প্রস্তুত করে জাতির সামনে উপস্থাপন করতে পারবেন।
২৯ জুলাই তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এক ফেসবুক পোস্টে জানান, ৫ আগস্টের আগেই ঐক্যমত্য নিশ্চিত হবে।
অঙ্গীকার
সনদের অঙ্গীকারগুলো হলো-
জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও ত্যাগের প্রতি সম্মান জানিয়ে ঘোষণাপত্রের পূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা;
শাসনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, নির্বাচন, জনপ্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম সংক্রান্ত সুপারিশসমূহ প্রয়োজনীয় সংবিধান সংশোধন, আইন পরিমার্জন বা নতুন আইন প্রণয়নের মাধ্যমে কার্যকর করা;
ঘোষণাপত্র আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হওয়ার পর নবনির্বাচিত সরকারের গঠনের দুই বছরের মধ্যে এসব সংস্কার সম্পন্ন করা;
বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া জুড়ে আইনগত ও সাংবিধানিক সুরক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন করা;
ঘোষণাপত্রের বিষয়বস্তুর জন্য পূর্ণাঙ্গ আইনগত ও সাংবিধানিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা;
সংবিধানের মধ্যে ২০২৪ সালের গণতন্ত্রী আন্দোলন ও গণ-অভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক গুরুত্বকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া।
আজ শুক্রবার বিকেল ৪টার পরে জমকালো অনুষ্ঠানে সংলাপে অংশ নেওয়া দলগুলোর প্রতিনিধিদের জুলাই সনদে সই করবে। এ জন্য জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় প্রস্তুত করা হয়েছে মঞ্চ। কিন্তু বাস্তবায়ন আদেশ, আইনি ভিত্তির নিশ্চয়তা, নোট অব ডিসেন্টসহ (আপত্তি) কয়েকটি বিষয় অমীমাংসিত থেকে যাওয়ায়
শেষ পর্যন্ত জুলাই সনদে সব দলের স্বাক্ষর করা নিয়ে সংশয় ও কিছুটা অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে।
এরই মধ্যে বাস্তবায়ন আদেশ ও আইনি ভিত্তির নিশ্চয়তা ছাড়া জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করার ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। নোট অব ডিসেন্টসহ সনদে সই করবে না বলে জানিয়েছে চার বাম দল। জামায়াতে ইসলামী বলেছে, তারা অনুষ্ঠানে যাবে, কিন্তু সনদে সই করবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত নেয়নি। বাস্তবায়নের সুপারিশ দেখেই সনদে স্বাক্ষর করবে তারা। আর বিএনপি জুড়ে দিয়েছে অঙ্গীকারনামায় নোট অব ডিসেন্ট যুক্ত করার শর্ত। এমন এক জটিল পরিস্থিতির মধ্যে আজ সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
জুলাই সনদে বিএনপি স্বাক্ষর করবে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল বৃহস্পতিবার ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে এক পথসভায় বলেন, ‘আগামী দিন আপনারা জানতে পারবেন, বিএনপি স্বাক্ষর (সনদে) করবে কি না। এত অস্থির হইয়েন না, একটু টেনশন থাকা ভালো।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি সংস্কার ইস্যুতে অত্যন্ত ইতিবাচক। অবশ্যই সনদে স্বাক্ষর করব, আমরা যে কথাগুলো বলেছি, সেগুলো যদি লিপিবদ্ধ করা হয়, অঙ্গীকারনামায় নোট অব ডিসেন্ট রাখা হয়। গণভোট তো মেনে নিয়েছি...নির্বাচনের দিনই গণভোট হবে। সুতরাং আমরা এখন পর্যন্ত অত্যন্ত ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছি।’
৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত সর্বশেষ সংলাপে বিএনপির পক্ষ থেকে সনদের অঙ্গীকারনামায় নোট অব ডিসেন্টের বিষয়টি উল্লেখ করার দাবি করেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। কিন্তু ১৪ অক্টোবর দেওয়া চূড়ান্ত সনদের অঙ্গীকারনামায় বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি। ফলে সনদ স্বাক্ষরের আগে এ নিয়ে চাপ দিচ্ছে দলটি।
গত ২০ মার্চ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দুই ধাপের সংলাপের ভিত্তিতে ৮৪টি প্রস্তাবে আপত্তিসহ ঐকমত্যে পৌঁছায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন, যার ভিত্তিতে জুলাই জাতীয় সনদ তৈরি করে তারা। সনদের চূড়ান্ত অনুলিপি গত মঙ্গলবার রাতে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়। ৮৪ প্রস্তাবের মধ্যে ৪৩টি সংবিধান সংশোধন সাপেক্ষে বাস্তবায়ন করতে হবে। বাকি ৪১টি অধ্যাদেশ, বিধি ও নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে হবে।
ঐকমত্য হওয়া ৮৪টি বিষয় ও বাস্তবায়নের সাত দফা অঙ্গীকারনামার ভিত্তিতে আজ জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করার কথা সংলাপে অংশ নেওয়া দলগুলোর। দ্বিতীয় ধাপের সংলাপে অংশ নেওয়া ৩০টি রাজনৈতিক দল ও জোটের দুজন করে প্রতিনিধিকে সনদের অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করতে কমিশন আমন্ত্রণ জানিয়েছে; যার মধ্যে বিএনপি, গণতন্ত্র মঞ্চসহ বিএনপির সমমনাসহ ২০টি রাজনৈতিক দল ও জোট স্বাক্ষরের বিষয়ে ইতিবাচক। জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম বাস্তবায়নপ্রক্রিয়া দেখেই সনদে স্বাক্ষর করতে চায় বলে জানা গেছে। বাস্তবায়ন আদেশের বিষয়বস্তু না থাকায় সনদে স্বাক্ষর করবে না বলে জানিয়েছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারী ছাত্রনেতাদের নিয়ে গঠিত রাজনৈতিক দল এনসিপি। আপত্তিসহ সনদে স্বাক্ষর করবে না বলে জানিয়েছে সিপিবি, বাসদ, বাংলাদেশ জাসদ ও বাসদ (মার্ক্সবাদী)।
এদিকে তিনটি বিষয়ে নিশ্চিত না হয়ে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে না বলে জানিয়েছে এনসিপি। বুধবার সকালে রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা তিনটি বিষয় নিশ্চিত হতে চাই। এক. জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের “টেক্সট” এবং গণভোটের প্রশ্নটি চূড়ান্ত করে আগেই জনগণের কাছে প্রকাশ করতে হবে। দুই. জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়া জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায়ের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জারি করবেন। তিন. গণভোটের মাধ্যমে জনগণ যদি জুলাই সনদে রায় দেয়, তবে “নোট অব ডিসেন্ট”-এর কোনো কার্যকরিতা থাকবে না। গণভোটের রায় অনুযায়ী আগামী নির্বাচিত সংসদ তাদের ওপর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সংবিধান সংস্কার করবে। সংস্কারকৃত সংবিধানের নাম হবে—বাংলাদেশ সংবিধান, ২০২৬।’ নাহিদ বলেন, ‘জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ছাড়া অর্ডারে স্বাক্ষর করা মূল্যহীন হবে। সেই বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা অনুষ্ঠানে অংশীদার হব না।’
এনসিপির এমন অনড় অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের রাজি করাতে গতকাল রাত পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়েছে ঐকমত্য কমিশন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের ভিত্তিতে সনদ তৈরিকে বাংলাদেশের ৫৪ বছরের রাজনৈতিক ইতিহাসে মাইলফলক বলে মনে করেন ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের বিষয়ে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ প্রচেষ্টার সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো একযোগে কাজ করেছে, সে ক্ষেত্রে ভিন্নমত থাকার কথা। তদুপরি একটা পথরেখা তৈরি করা হচ্ছে। এটাকে সম্পূর্ণ বা পূর্ণাঙ্গ দাবি করা যাবে না। কিন্তু যতটুকু অর্জিত হয়েছে, গত ৫৪ বছরে আমরা ততটুকু অর্জন করতে পারিনি। রাষ্ট্র সংস্কারের আরও অনেক কাজ থাকবে, সেই প্রক্রিয়া রাজনৈতিক এবং সাংবিধানিক। জনপ্রতিনিধিদের সে দায়িত্ব নিতে হবে। ’
গুরুত্বপূর্ণ যেসব বিষয়ে মতানৈক্য
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবে দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকতে পারবেন না বলা আছে। বিএনপি দলীয় প্রধানকে প্রধানমন্ত্রী করার পক্ষে। প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার এবং সংসদের দ্বিতীয় বৃহত্তম দলের নেতার সমন্বয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান বাছাই কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেছে কমিশন। কমিটি ব্যর্থ হলে তাদের সঙ্গে বিচার বিভাগের দুজন প্রতিনিধি যুক্ত হবেন, যাঁরা গোপন ব্যালটে র্যাংকড চয়েজ (ক্রমভিত্তিক) পদ্ধতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান নির্বাচন করবেন। কিন্তু বিএনপি র্যাংকড চয়েজের বিরুদ্ধে, সংসদের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান নির্বাচনের পক্ষে। কমিশন সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বে (পিআর) উচ্চকক্ষ গঠনের প্রস্তাব দিলেও তা চায় না বিএনপি। তারা আসনের ভিত্তিতে উচ্চকক্ষ চায়। অন্যদিকে সিপিবি, বাসদসহ কয়েকটি বাম দল উচ্চকক্ষের বিপক্ষে।
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে অর্থবিল এবং আস্থা ভোট ছাড়া সব বিষয়ে সংসদ সদস্যদের নিজ দলের বিরুদ্ধে ভোটদানের ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাব ঐকমত্য কমিশনের। বিএনপি এ দুটির সঙ্গে সংবিধান সংশোধন ও জাতীয় নিরাপত্তা (যুদ্ধ পরিস্থিতি) যুক্ত করার পক্ষে।
আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতিকে পরবর্তী প্রধান বিচারপতি নিয়োগের প্রস্তাব করেছে কমিশন। তবে সিনিয়র দুই বিচারপতি হতে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের কথা নির্বাচনী ইশতেহারে রাখা দল বিজয়ী হলে, সেটি করতে পারবে। বিএনপি নির্বাচনী ইশতেহারে সেটি রাখবে। ন্যায়পাল, সরকারি কর্ম কমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক ও দুর্নীতি দমন কমিশনের নিয়োগের বিধান সংবিধানে যুক্ত করার বিপক্ষে বিএনপি।
সনদের ঐকমত্য হওয়া ৫ নম্বর সুপারিশে বলা হয়েছে, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৫০(২) বিলুপ্ত করা হবে এবং এ সংশ্লিষ্ট ৫ম, ৬ষ্ঠ এবং ৭ম তফসিল সংবিধানে রাখা হবে না। বিষয়টিতে বিএনপি, জামায়াতসহ রাজনৈতিক দলগুলো একমত। বর্তমান সংবিধানের ৫ম তফসিলে ৭ মার্চে শেখ মুজিবের ভাষণ, ৬ষ্ঠ তফসিলে ২৬ মার্চে শেখ মুুজিবের স্বাধীনতার ঘোষণা এবং ৭ম তফসিলে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র আছে। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বাদ দেওয়ার সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন বিষয়টি বিবেচনা করে শুধু ৫ম ও ৬ষ্ঠ তফসিল সংবিধান থেকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ রেখেছে শেষ পর্যন্ত।
প্রস্তুত অনুষ্ঠানস্থল
সরকারের পক্ষ থেকে সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাপনার জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাদের তত্ত্বাবধানে এরই মধ্যে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। দক্ষিণমুখী এই মঞ্চে প্রধান উপদেষ্টা, ঐকমত্য কমিশনের সদস্য, ৩০টি রাজনৈতিক দল ও জোটের দুজন করে প্রতিনিধির বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জুলাই সনদের একটি ‘মাস্টারপিস’ থাকবে, যার তিনটি অংশ থাকবে সংস্কার উদ্যোগের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটসহ ভূমিকা, সংস্কার প্রস্তাবের তালিকা এবং একটি অঙ্গীকারনামা। অঙ্গীকারনামার ৩০টি কপি দলীয় প্রতিনিধিদের স্বাক্ষরের জন্য উপস্থাপন করা হবে। পরে প্রতিনিধিরা ‘মাস্টারপিস’-এ স্বাক্ষর করবেন বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রায় দুই হাজার অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। দুই পর্বের অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বের স্বাক্ষর অনুষ্ঠান মাগরিবের আগেই শেষ হবে। নামাজের বিরতির পরে দ্বিতীয় পর্বের প্রজেকশন ম্যাপিংয়ে সনদ তৈরির পটভূমি ভিডিওচিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরা হবে। প্রজেকশন ম্যাপিংয়ের স্ক্রিন হিসেবে জাতীয় সংসদ ভবনকে ব্যবহার করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
কমেন্ট বক্স